শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান প্রার্থীরা

emon / ৩১ Time View
Update : সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫
ছবিতে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী উম্মা উসওয়াতুনের একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এই ছাত্রী তাঁর নির্বাচনী প্রচারে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে চান। প্রথমটি হচ্ছে প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। দ্বিতীয়ত হয়রানির যেসব অভিযোগ আসে, সেগুলোর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের অগ্রগতি যাতে সবাই জানে, সে লক্ষ্যে কাজ করা।

 

 

ডাকসুতে ১২টি সম্পাদকীয় পদ রয়েছে। এসব পদে নির্বাচন করতে যাওয়া প্রার্থীরাও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে চান। যেমন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক প্রার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির বাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন, সে জন্য ক্যাম্পাসের প্রতিটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি আলাদাভাবে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা আবাসন–সংকট। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এ বিষয়ে সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চান। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যাকেও গুরুত্ব দেবেন প্রার্থীরা।

রেজিস্ট্রার ভবনের হয়রানি কমাতে ‘অটোমেশন’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চান বামপন্থী সাত সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে সদস্য পদপ্রার্থী ইসরাত জাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবাসন, সুষম খাবার ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করবেন।

ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্যানেলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছাত্রদলের প্যানেলে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন ইবনু আহমেদ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে র‍্যাম্প (প্রতিবন্ধীদের চলাচলের পথ) নেই। ভোটে জয়ী হলে প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান তিনি।

গতকাল রোববার ক্যাম্পাসের মধুর ক্যানটিন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও ছাত্রদের তিনটি হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়ে গেছে। এখন সব আলোচনার কেন্দ্রে ডাকসু নির্বাচন।

 ‘গেম চেঞ্জার’

এবারের ডাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, নারী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন, যা মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ক্যাম্পাসে এমন আলোচনা আছে যে নারী শিক্ষার্থীদের বড় অংশের ভোট যেদিকে যাবে, তাঁদেরই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এবারের ডাকসু নির্বাচনে অন্তত ১০টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিভিন্ন প্যানেল নিজেদের ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ দেখাতে নারী, সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীকে প্রার্থী করলেও সংখ্যাটি খুবই কম। শীর্ষ তিন পদে ( ভিপি, জিএস ও এজিএস) নারী প্রার্থী মাত্র ১০ জন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী আছেন ৫ জন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কেউ শীর্ষ তিন পদে প্রার্থী হননি।

তবে ডাকসুর সদস্য পদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচ শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া দুটি সম্পাদকীয় পদে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তিনজন প্রার্থী রয়েছেন।

গতকাল ক্যাম্পাসে গিয়ে ছয়জন প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, তাঁদের প্রচারে কী কী বিষয় গুরুত্ব পাবে। জবাবে প্রায় সবাই বলেছেন, সব শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ই তাঁদের লক্ষ্য। তবে প্রচারে বিশেষ করে নারীদের সমস্যা-সংকটকেন্দ্রিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস থাকবে।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। কিন্তু এর আগেই নির্বাচনী প্রচার কার্যত শুরু হয়ে গেছে। গত শুক্রবার থেকে হলে হলে যাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘কুশল বিনিময়ের’ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

প্রার্থীদের অনেকেই নিজের বিভাগের (ডিপার্টমেন্ট) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। নিজ জেলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করছেন। এ ছাড়া সম্ভাব্য যেসব ক্ষেত্র থেকে ভোট সংগ্রহ করা যাবে, সেসব বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন।

আলোচিত একজন ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে নিজ বিভাগ ও এলাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সমর্থকেরা বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে ভোট চাওয়াও শুরু করেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁরা শিগগিরই আলোচনায় বসবেন।

গতকাল দুপুরে বিজয় একাত্তর হলের ক্যানটিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘কুশল বিনিময়’ ও খাওয়া-দাওয়া করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী তানভীর আল হাদী। এরপর রাতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে কুশল বিনিময় করতে যান আবিদুল।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ডাকসুতে পদ আছে ২৮টি। ২১ আগস্ট প্রকাশিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ডাকসুতে বৈধ প্রার্থী ৪৬২ জন। আর ১৮ হল সংসদে প্রাথমিকভাবে বৈধ ঘোষিত প্রার্থী ১ হাজার ১০৮ জন।

আজ সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আর আগামীকাল বিকেল চারটায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোট গ্রহণ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগপর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category