ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকারের আধুনিক অস্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল ৩ টায় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা হরণে ব্যবহৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে লাল কার্ড প্রদর্শন’ শীর্ষক এক সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা এমন মন্তব্য করেন।
সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আজকে দেশের সাধারণ মানুষ চায় মাছ মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা। আর ক্ষমতাসীনরা চায় দূর্নীতি আর চুরির স্বাধীনতা। আজকের বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি হিটলারের শাসনামলকে স্মরণ করে দিচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে সাড়ে চার বছরে প্রায় দুই হাজার আটশ মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ২১ এবং ২৮ নাম্বার ধারার মাধ্যমে যে কাউকে সরকার যে কোন সময় গ্রেপ্তার করতে পারবে। ২১ নাম্বার ধারায় বলা আছে যদি কোন মানুষ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা এগুলোকে বিদ্বেষমূলক কোন উক্তি করে তাহলে ওই ব্যাক্তিকে দশ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। ২৮ নাম্বার ধারাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার কথা বলা আছে। কিন্তু স্পষ্ট করে বলা নাই কোন কথাগুলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শামিল।
তিনি আরো বলেন, এইরকম একটি আইন দিয়ে সরকার মূলত আধুনিক যুগে একটি আধুনিক অস্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অস্ত্রের মাধ্যমে তারা প্রতিবাদী মানুষ, প্রতিবাদী সাংবাদিকদেরকে দেশের যেখানেই পাচ্ছে সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করছে। হিটলার অস্ত্র দিয়ে রাতের আধারে তুলে নিয়ে আসত আর তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে মানুষদের বাসাবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেভাবে আমাদের উপর হামলা করেছে ঠিক একইভাবে আওয়ামিলীগ এদেশের মানুষদের উপর নির্যাতন করছে। প্রতিদিন কোন না কোন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলায় শতশত মানুষকে জেলে নির্মম জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এটি এমন আইন যে আইনের ধারায় আই.সি.সি.পি.আর এর ধারাগুলোকে অমান্য করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই আইনে প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তির দায়ে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে মামলা দেয়া হয়েছে। ১৫০ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা বিগত অনেকদিন থেকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলায় জেলখানায় পছে মরছে। অথচ তার নামে সে রকম কোন অভিযোগ নেই। সম্প্রতি মানুষের অধিকারের কথা বলায় এক সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন সরকার বলছে আমরা উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আসলে তারা বিভিন্ন কলাকৌশল করে বাংলাদেশকে উত্তর কোরিয়ায় পরিণত করছে। সরকার একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোকে যেভাবে চেপে ধরেছে তার দ্বারা সরকার অন্য অন্য গণমাধ্যমকে সাবধানতার মেসেজ দিচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে শুধু সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ নয় বিরোধী দল মতের কণ্ঠ ও রোধ করা হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের আন্দোলন কে বেগবান করতে হবে।