পাঁচ বছর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় চারটি মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ‘পুলিশের কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনে হামলা’, ‘সরকারি কাজে বাধা’ এবং ‘নাশকতা’র অভিযোগ করা হয়। বর্তমানে এ চারটি মামলা তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। পাঁচ বছরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৪১ বার সময় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্ত সংস্থা এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মামলাগুলোর তদন্ত চলছে, শেষ হলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, এ চার মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মোট ২০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছে।
আসামিরা হলেন— গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমান, মাসুদ আলম মাসুদ, সাইদুর রহমান, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী, আলী হোসেন, আতিকুর রহমান, রাকিবুল হাসান, তরিকুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, আলী হোসেন, মাজহারুল ইসলাম, রবিন হুসাইন, মাহফুজুর রহমান, জাকারিয়া, সৈয়দ মোহাম্মদ আমানুল্লাহ, সোহেল ইসলাম, মাসুদ সরকার এবং জসিম উদ্দীন আকাশ।
চারটি মামলার মধ্যে ‘পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেওয়া’র অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা লোহার রড, পাইপ, হাতুড়ি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে শাহবাগ থানাধীন টিএসসি মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে জনতাবদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কারের আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মিশে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং জনসাধারণের যানবাহন ভাংচুর করেন। এছাড়া আশপাশের দোকান-পাট, স্থাপনায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষতিসাধন করেন। মূল্যবান জিনিসপত্র রাস্তায় এনে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।এ মামলার আসামিরা হলেন— ফারুক হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মাসুদ আলম মাসুদ, সাখাওয়াত হোসেন, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী, রাকিবুল হাসান ও আলী হোসেন। তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।
আর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা’র অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এসএম কামরুল হাসান। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল রাতে শতাধিক অজ্ঞাত মুখোশধারী সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, পাইপ, হাতুড়ি ও লাঠি ইত্যাদি নিয়ে উপাচার্য ভবনে প্রবেশ করেন। মালামাল ভেঙে চুরমার ও লুট করে তারা। দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় ও দুটি গাড়ি ভাংচুর করে। আসামিরা উপাচার্যকে হত্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল এবং সরকারকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস নিয়ে এ হামলা চালান। এই মামলার আসামি রাশেদ খান, মাসুদ আলম মাসুদ, সাইদুর রহমান, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী, আলী হোসেন, আতিকুর রহমান ও রাকিবুল হাসান জামিনে রয়েছে।সরকারি কাজে বাধা, আক্রমণ ও বলপ্রয়োগ’-এর অভিযোগে একটি মামলা করে পুলিশ। এ মামলার আসামিরা হলেন— মাজহারুল ইসলাম, রবিন হুসাইন, মাহফুজুর রহমান, জাকারিয়া ও সৈয়দ মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
এছাড়াও ‘নাশকতা’র অভিযোগে আরেকটি দায়ের করেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক ভজন বিশ্বাস। মামলার এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, আসামিরা পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দিয়ে আক্রমণ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ ও জনসাধারণকে জখম করে।
এই মামলার আসামিরা হলেন— সোহেল ইসলাম, মাসুদ সরকার, মশিউর রহমান, জসিম উদ্দীন আকাশ, আলী হোসেন, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বি, রাকিবুল হাসান ও মাসুদ আলম মাসুদ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃত আসামিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অথচ নিরীহ, মেধাবী ছেলেরা বছরের পর আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মামলাটির প্রতিবেদন দাখিল করা হোক। এ মামলায় ভুক্তভোগী হয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের অব্যাহতি দেওয়া হোক। এ মামলার কারণে অনেক মেধাবীরা চাকরি বঞ্চিত হচ্ছে।’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘মামলা তদন্ত করতে তো এতো বছর লাগার কথা নয়। তদন্তে যদি কেউ চিহ্নিত বা শনাক্ত না হয়, তাহলেও প্রতিবেদন দিতে হবে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত।’