বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষক ও জেনোসাইড সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে দ্রুত অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
রবিবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানায় তারা৷ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এর লেখা ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ নামক বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজে হাজির হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় পাকিস্তান’ বলতে শুনেছেন। উক্ত বইয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি। তার উল্লেখিত পুস্তকে এমন কথাও লিখেছেন যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে ১৯৭১-এ বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা ১৯৪৮ সালের ‘জেনোসাইড কনভেনশনের’ আওতায় পড়ে না। জেনোসাইড কনভেনশনের সংজ্ঞাভুক্ত হতে হলে একটি মানবগোষ্ঠী কর্তৃক অন্য এক মানবগোষ্ঠীকে আক্রমণ করতে হয়। অধ্যাপক ইমতিয়াজ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা করে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে লিখেছেন, “একটি মৌলিক প্রশ্ন হলো, আসলেই কি ত্রিশ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছিল, নাকি মৃতের সংখ্যা কম ছিল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার অপরাধে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে অনতিবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোন পাকিস্তানি দালাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারে না।”
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আমরা কোন আপোষ করবো না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করার অপরাধে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। এই প্রতিবাদ শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ যে অপরাধ করেছেন সেটা অমার্জনীয়। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অধ্যাপক ইমতিয়াজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে চরমভাবে অবমাননা করেছেন। তার জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে পারে না। গণহত্যা গবেষণা কেন্দ্রে সে থাকতে পারে না। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল। ঢাবি উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, সহ-সভাপতি কানিজ ফাতেমা, অভিশ্রুতি রায়সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।