আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন এখন চোরাবালিতে আটকে গেছে। সামনেও যায় না, পিছনেও যায় না; ডানেও যায় না, বামেও যায় না। তাদের আন্দোলন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা চিত্রকর্ম কাদায় পড়া গরুর গাড়ির মতো। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা মেরামত করেছে। তাদের হাতে আর দেশ যাবে না। তাদের আন্দোলন, পদযাত্রা, মিছিল, নেতা, ১০ দফা সব ভুয়া।
আজ বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপকর্মের সাথে জড়িত কাউকে নেতা বানানো যাবে না। যারা ছিনতাই করে, চাঁদাবাজি করে, সিট বাণিজ্য করে, সন্ত্রাসী কাজকর্ম করে তাদেরকে আমাদের দরকার নাই। তাদের বের করে দাও। ছাত্রলীগের নামে যারা এসব করে তাদের শাস্তি স্থায়ী শাস্তি দিতে হবে। সেই সাথে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হবে। শেখ হাসিনার ভালো কাজগুলো যাতে আপনাদের একটা খারাপ কাজের কারণে ঢেকে না যায় এজন্য সবাইকে অনুরোধ জানাই। এসময় তিনি ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, ভালো ছেলে-মেয়েরা থাকলে আরও ভালো ছেলে-মেয়েরা আকর্ষিত হবে। এমন কিছু ঘটনা ঘটে আমরা লজ্জা পাই। আমরা তো ছাত্রলীগ করেছি। এমন কেন হবে? এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। সততার সাথে কাজ করা স্মার্ট কর্মী চাই। ভালো কাজের, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সৈনিক হতে হবে। আবেগের নয় চেতনার সৈনিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই জনপদে দুইজন মানুষকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। যে দুজন মানুষ এই জনপদে বিধাতার সৃষ্টি। একজন স্বাধীনতার জন্য আর একজন মুক্তির জন্য। তিনি (বঙ্গবন্ধু ) আজ নেই কিন্তু তার উত্তরাধিকারী বেঁচে আছেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এখানে এই পতাকা পতপত করে উড়বে। নদীর কলতান যতদিন থাকবে, সাগরের গর্জন যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নাই।
জিয়াউর রহমান ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমান এখানে পরিকল্পিতভাবে শিশুপার্ক করেছেন; এ ইতিহাস বাঙালি ভুলে যাবে না। ৭ মার্চ নিষিদ্ধ ছিলো। ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়ি নিষিদ্ধ, টুঙ্গিপাড়া নিষিদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিলো। এ ভাষণ বাজানোর কারণে আমাদের অনেক কর্মীকে জেলে যেতে হয়েছিল। হ্যামলেটকে বাদ দিয়ে হ্যামলেট নাটক মঞ্চস্থ করেছেন জিয়াউর রহমান
বিএনপি অবৈধ দল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি অবৈধ ব্যক্তির হাতে গড়া অবৈধ দল। বিএনপির একটা সংবিধান আছে। ওই সংবিধানের কোথায় আছে ফখরুল যে বারো বছর ধরে মহাসচিব। সে যে পদত্যাগের দাবি করে সেই নিজেই তো পদত্যাগ করেনি। সে তো বিএনপির সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ মহাসচিব।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) নাকি শেখ হাসিনাকে উৎখাত করবে, আওয়ামী লীগকে উৎখাত করবে। এই যে ১০ই ডিসেম্বর কত কি করলো। খালেদা জিয়া নাকি দেশ চালাবে, তারেক নাকি দেশে আসবে। সব তো হলো। শেষ পর্যন্ত নয়া পল্টনও পেল না। অবশেষে গোলাপবাগ মাঠে জায়গা হলো।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হঠাৎ করে বেরিয়ে আসা কোন নেতা নয় অথবা স্বাধীনতার স্বপ্নে প্রদত্ত কোন মহোৎসব নয়। আমাদের প্রেমপত্র লেখার মধ্য দিয়ে এ স্বাধীনতা আসেনি। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় বাঙালি অস্ত্র হাতে নিয়ে সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে লড়াই করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো।
ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য নানক বলেন, সামনের ভোটে যদি আমাদের জয়ী হতে হবে। নতুবা আমার স্বাধীনতা বিপদসংকুল হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারার কবর রচিত হবে। সেই কারণে ছাত্রলীগের বন্ধুরা আপনাদেরকে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী দিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো এই হোক আমাদের প্রত্যয়।
আলোচনা সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সদস্য তারানা হালিম।