ভাস্কর্যের মাধ্যমে কোন প্রতিবাদ বা কোন ইতিহাসকে যেভাবে জীবন্তরূপে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা হয়তো অন্য কোন শিল্পে সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই অনেকভাবে প্রতিবাদ করেছে। তবে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিবাদ করে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাকা) চারুকলা অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী।প্রতিবাদস্বরূপ নির্মাণ করা হয় রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য,যার মুখে টেপ বাধা কথা বলতে পারছেন না।হাতের বইটি পেরেক দিয়ে আটকানো, খুলতে পারছেন না৷
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বসানো হয় রবীন্দ্র ভাস্কর্যটি। যা আমাদের দেশের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরন করাকে রিপ্রেজেন্ট করে। এটি পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে থাকবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী শিমুল কুম্ভকার বলেন, সম্প্রতি সময়ে দেখা গেছে এক দুইটি বই প্রকাশ করার কারণে সেই প্রকাশনী বইমেলায় স্টল পাচ্ছেনা। এটি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে একধরনের চাতুরী এবং বই প্রকাশ করতে না দেয়ার একটি পায়তারা৷ এছাড়াও দেখা যায় সাংবাদিকরাও লিখতে পারেন না।তাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এই সমস্ত কিছুই যে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা,ও সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে সেটাই আমরা ফুটে তুলতে চেয়েছি এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যই করা হয়েছে কারণ, আমরা জানি রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রতিক। ভাস্কর্যে দেখা যায় যে রবীন্দ্রনাথের হাতের বইটি পেরেক মারা ও মুখে টেপ লাগানো। এইটা স্মরণ করিয়ে দেয় যে বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা নিরন্তর হরণ করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আলফে সানী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতাকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেমন, হলি আর্টিজেনের ঘটনাকে কেন্দ্র নির্মাণ করা পরিচালক ফারুকীর সিনেমা বহুদিন থেকে সেন্সরশীপে আটকা পড়ে আছে,মুক্তি পাচ্ছেনা। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে সেই একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত ছবি কোন বাধা ছাড়াই পরিবেশিত হচ্ছে। সৃজনশীলতাকে এভাবে আটকে রাখার চেষ্টা করা হলে একসময় সৃজনশীল কোন মানুষই খুজে পাওয়া যাবেনা এই দেশে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া সম্প্রতি তিনটি বইকে কেন্দ্র করে আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি বাংলা একাডেমি। এভাবে আমাদের লেখকদের নতুন বই বের করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আমাদেরকে নতুন চিন্তার সাথে পরিচিত হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। রবীন্দ্র ভাস্কর্যটি এইসব কিছুই সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী এর সমালোচনা করে বলেন, এখানে ভিনদেশী এক কবির ভাস্কর্য না এনে আমাদের দেশের কোন ক্ষ্যাতনামা কবির ভাস্কর্য ও নির্মাণ করা যেত। মুক্তচিন্তার প্রতিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের পরিবর্তে কাজী নজরুল ও বসতে পারতেন।
এই ভাস্কর্য নির্মানে জড়িত ছিলেন, সাব্বির হোসেন, সুমিত রায়, নিজামুদ্দিন হৃদয়, ওয়াহিদা বিনতে রোকন, জুয়েল মিয়া, ফয়জুল্লাহ আনান, নাইম উদ্দিন, আশেক মাহমুদ, তানভিরুল ইসলাম, সাবরিন ঋতু, সিয়াম আহসান, আবিদ, সজিব, বিশাল, শিমুল, জয় সহ আরো অনেকেই।