বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ এর পর্দা উঠবে আগামী বুধবার। করোনা মহামারির পর এবারে যথাসময়ে ও বৃহৎ পরিসরে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির সর্ববৃহৎ এ উৎসব। এ নিয়ে স্টল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বইমেলা সংশ্লিষ্ট সকল কাজের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ স্টলের কাজ শেষ। এখন শুধু বই উঠানো বাকি। তবে কিছু কিছু স্টলের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। সেগুলোর কাজ চলছে। এদিকে মেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষ সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ বলে জানানো হয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বুধবার (১লা ফেব্রুয়ারী) বিকেল ৩টায় উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে এবারের বইমেলা। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য- ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’ বইমেলা উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিশেষ অতিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ-উম্মোচন করবেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করবেন।
সোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ১০০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলার ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্ত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে আরো আরো ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি সাল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল। গতবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের স্থানটিকেও এবারের মেলার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। সেখানে নামাজের স্থান, ওয়াশশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।
শিশুচত্বর ও লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে বলা হয়, শিশুচত্বরটির পরিধি কম হওয়ায় এবার এই চত্বরটি মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
অন্যদিকে এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজনও থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
এবারের মেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চানখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।