সরস্বতী হলেন হিন্দুধর্মে জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী। হিন্দু ধর্মীয় অনুসারীদের কাছে অন্যতম পূজা হচ্ছে এই সরস্বতী পূজা। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী সরস্বতী জগতে আসেন। যাঁকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হিন্দু ধর্মাবলাম্বীর ঘরে ঘরে পালিত হয় সরস্বতী পূজা। এবারের পূজা আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সারা দেশে পালিত হবে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর বৃহৎ পরিসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল মাঠে পালিত হয় সরস্বতী পূজা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউট স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। কিন্তু করোনা মহামারির প্রভাবে গত দুবছর স্বল্প পরিসরে পালিত হয়েছে এ পূজা। মহামারির ধকল কাটিয়ে বৃহৎ পরিসরে পালিত হবে এবারের সরস্বতী পূজা। যে কারনে জগন্নাথ হলে বিরাজ করছে আমেজের পরিবেশ। একদিকে মূর্তি বানাতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা অন্যদিকে দুই বছর পর এ পূজায় অংশগ্রহণ করার উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।
জগন্নাথ হল মাঠে বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী পঞ্চানন পাল ও তার দল। তৈরি করছেন প্রতিমা। প্রায় শেষের দিকে ৭৩টি প্রতিমা বানানোর কাজ। কথা হলে মৃৎশিল্পী পঞ্চানন পাল জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে জগন্নাথ হলে এই প্রতিমা বানানোর কাজ করে আসছি। গত দুবছর পর এবার বড় আকাড়ে পূজা হবে; তাই খুব ভালো লাগা কাজ করছে।
এদিকে পূজা ঘিরে বেশ উচ্ছ্বসিত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন, দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সরস্বতী পূজা পালিত হয় জগন্নাথ হলে। যা খুবই গর্বের বিষয়।
এ নিয়ে জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সূর্য কান্ত রায় বলেন, জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা তথা দেশের সর্ববৃহৎ পূজা দুই বছর পর হতে যাচ্ছে। যে কারনে সত্যিই অন্যরকম একটু অনুভূতি কাজ করছে। আন্তঃব্যক্তিক মেলবন্ধন ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করে সমাজের অজ্ঞনতা দূর করে বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে মা সরস্বতী।
ঢাবির বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ হল চত্বরজুড়ে বিভিন্ন আইডিয়া ও থিমভিত্তিক ৭৩টি প্রতিমা স্থাপন ও মণ্ডপ নির্মাণ করা হচ্ছে। হল মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কতগুলো প্রতিমা কাদা-মাঠি দিয়ে তৈরি করে শুকানোর জন্য রোদে দেওয়া হয়েছে। কিছু প্রতিমায় চলছে রং করানোর কাজ। প্রতিমা বানানোর এ কাজ পুরোপুরি শেষ হবে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে। যে কারণে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
সাথে চলছে মন্ডব বসানো ও সজ্জিত করার কাজও। পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে মন্ডবের জায়গা। সেই অনুযায়ী কাজ করছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ১টি ও চারুকলা অনুষদ থেকে ১টি এবং বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৭২টি মন্ডবসহ মোট ৭৩টি মন্ডবে পালিত হবে পূজা। বুধবার (২৫ জানুয়ারী) বিকেলের মধ্যে সকল কাজ শেষ হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, এবার মোট ৭৩টি পূজামন্ডব অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ১টি ও চারুকলা অনুষদ থেকে ১টি এবং বাকি ৭১টি আলাদা আলাদা বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করবে। প্রতি বছরের ন্যায় আমাদের পক্ষ থেকে সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করা হয়েছে এবং যেগুলো এখনও বাকি আছে সেগুলোর কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাহায্য থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, পুলিশ এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করি সবার অংশগ্রহণে সুন্দরভাবে আমাদের এই পূজা উদযাপন করতে পারবো।