নতুন বছরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ইতিহাস বিকৃতি, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু ও ট্রান্সজেন্ডার গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্যমূলক কোটা দেয়ার প্রতিবাদে লালকার্ড সমাবেশ করতে চেয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। এ শিক্ষার্থীরা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ নামে একটি ইসলামীমনা ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত।
সমাবেশ শুরুর আগে পুলিশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যানার কেড়ে নেয়া ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেও দ্বারা কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মোবাইল কেড়ে নেয়া ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১২টায় নতুন বছরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ইতিহাস বিকৃতি, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু এবং ট্রান্সজেন্ডার গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্যমূলক কোটা দেয়ার প্রতিবাদে পাঠ্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করে ‘লালকার্ড সমাবেশ’ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ চত্ত্বরে অবস্থান নেয়।
এর কিছুক্ষণ পর কর্মসূচীর ব্যানার কেড়ে নেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন পুলিশ নিজ হাতে ব্যানারটি গুটিয়ে ফেলছেন।
এদিকে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নেয়ার ভিডিও ধারণ করতে গেলে কয়েকজন সংবাদ কর্মীকে বাধা দেয়া হয়। তাদের ফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
এ প্রসঙ্গে এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থী জামালুদ্দিন খালিদ বলেন, আজকে আমাদের ১২টায় সমাবেশ ছিল। আমরা এখানে আসার পরে দেখলাম, পুরো জায়গাটা পুলিশ ঘিরে ছিল। যেহেতু পুলিশ থাকতেই পারে, উনারা আমাদের নিরাপত্তা দেবেন। এখানে আমাদের মাইক এবং ব্যানার চলে আসতেই হুট করে পুলিশের একজন বড় কর্তা ব্যক্তি আমাদের ব্যানারটি ছিনিয়ে নেন এবং মাইককেও চলে যেতে বলেন। একটু পর আমাদের ছাত্রলীগের ভাইয়েরা এসে এখানে অবস্থান নিয়েছেন। যার কারণে আমরা আর কর্মসূচি পালন করতে পারিনি।
দৈনিক যায়যায়দিনের এক সংবাদকর্মী বলেন, আমি যায়যায়দিন পত্রিকায় কাজ করি। আমি এখানে এসেছিলাম সংবাদ সংগ্রহের জন্য। পুলিশের বাধার পর তারা যখন চলে যাচ্ছিলো তখন আমি একজনের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলাম। এসময় কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মী এসে আমার ফোন কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে খুব কষ্ট করে আমি আমার ফোন উদ্ধার করি।
এনটিভি অনলাইনের ঢাবি প্রতিনিধি জাফর আহমেদ বলেন, লালকার্ড সমাবেশ ভেঙে যাওয়ার পর আমিসহ কয়েকজন সংবাদকর্মী সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জামাল উদ্দিন খালিদের ভিডিও বক্তব্য নিচ্ছিলাম। ওই মুহুর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আমাদের মোবাইল ক্যামেরা বন্ধ করতে এবং ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এরপর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। কিছুক্ষণ পর আমার পরিচয় জানার পর তারা সবাই এসে সরি বলে এবং ক্ষমা চায়। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়।
তবে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে পুলিশ। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, আমরা কাউকে সরিয়ে দেয়নি, ব্যানারও কেড়ে নিইনি। এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তাদেরকে আমি বলেছি এবং তারা তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশও করেছে। এ বিষয়ে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসে তাহলে আমরা ব্যাবস্থা নিব।